সমাহার শীর্ষ সংবাদ

সমাহার শীর্ষ সংবাদ সমাহার এ আপনাকে স্বাগতম: এই ব্লগ থেকে বিভিন্ন ধরনের কৃষি পরামর্শ পাবেন। আপনিও হতে পারেন একজন সফল কৃষিখামারী।

Bangladesh

কৃষি পরামর্শ


বেগুন চাষ ও এর পুষ্টিগুণ

ইহা একটি জনপ্রিয় সবজি। বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলায় বেগুন আবাদ হয় এবং সারা বছর এটির চাষ করা যায়। বেগুন দিয়ে অনেক রসদ খাবার তৈরি করা যায়। শীত মৌসুমে এর ফলন একটু বেশি হয় তবে বর্ষাকালে উচু মাটিতে এর ফলন ভালো পাওয়া যায়।



বাংলা নামঃ বেগুন
ইংরেজী নামঃ Brinjal / Egg plant
বৈজ্ঞানিক নামঃ Solanum melongena
পরিবারঃ Solanaceae

বেগুনের পুষ্টিগুণ নাম যার বেগুন, তার আবার পুষ্টিগুণ কী- এ ধরনের কথা বলেন অনেকে। কিন্তু আসলে বেগুনেরও যথেষ্ট পুষ্টিগুণ রয়েছে। ১০০ গ্রাম আহার-উপযোগী বেগুনে রয়েছে ০.৮ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১.৩ গ্রাম আঁশ, ৪২ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১.৮ গ্রাম আমিষ, ২.২ গ্রাম শর্করা, ২৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৯ মিলিগ্রাম লৌহ, ৮৫০ মাইক্রো গ্রাম ক্যারোটিন, ০.১২ মিলি গ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২, ও ৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি ইত্যাদি।

বেগুন এর উপকারিতাঃ  নিম্নমাত্রার সম্পন্ন বেগুন রক্তের খারাপ ও উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল দূর করে। আমাদের রক্তে free radical নামে এক ধরনের ক্ষতিকর উপাদানের সৃষ্টি হয়, বেগুন এই free radical ধ্বংস করে দেয়। nasunin নামে এক ধরনের phytonutrient রয়েছে বেগুন। যা মস্তিষ্কের শিরা উপশিরার দেয়ালে চর্বি জমতে বাধা দেয়। তার কারনে ব্রেইন স্ট্রোক, মস্তিষ্কের রক্ত ক্ষরণ জনিত রোগ দূর হয়। মস্তিষ্কের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা এবং সরবরাহ বৃদ্ধি করে। পরিণামে আমাদের কাজের গতি শক্তি বৃদ্ধি পায়।বেগুন flavedon, kolinergik এসিড নামে এক ধরনের এসিড রয়েছে, যা শরীরে প্রবেশকৃত রোগ জীবাণু, টিউমারের জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার আঁশ-জাতীয় খাদ্য উপাদান। যা বদ হজম দূর করে। বেগুন আরো রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি, শর্করা, চর্বি, আমিষ, আয়রন। বেগুন এর উদ্ভিজ্জ আমিষ শরীরের হাড়কে করে শক্তিশালী।
যেসব মহিলা নিয়মিত শাকসবজি, বিশেষত বেগুন খেয়ে থাকেন, তাঁদের ঋতুস্রাবের সমস্যা তুলনা মূলক ভাবে অনেক কম হয়। এই মৌসুমে সর্দি, কাশি দূর করে বেগুন। বাতের ব্যথা, সর্দি জ্বর দূর করতে বেগুন রাখে অগ্রণী ভূমিকা। যারা ক্রমশ মোটা হওয়ার অসুখে ভুগছেন, তারা বেগুন পুড়িয়ে ভর্তা খেলে উপকার পাবেন। লিভার কিংবা যকৃতের অসুখের জন্য ত্বকের হলুদ ভাব দূর করে বেগুন। বেগুন এর আরো গুণ হলো মূত্রবর্ধক। কোনো কারণে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে কচি বেগুন এর তরকারি প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। সবাই বেগুন সহ্য করতে পারে না। বেগুন খেলে অনেকের অ্যালার্জি হয়। অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে বেগুন পরিহার করা শ্রেয়।


বেগুনের আরও উপকারিতাকে যদি ক্রমানুসারে সাজাইঃ
বৃষ্টি-বাদলার এই মৌসুমে সর্দি, কাশি, কফ দূর করে বেগুন।
বেগুনের ফোলেট রক্ত গঠনে এবং এর পটাশিয়াম মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বেগুনের উদ্ভিজ্জ আমিষ শরীরের হাড় শক্ত করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এডমা (Edma) প্রতিহত করে। প্রতিহত করে দেহের সাধারণ ব্যথা।
বেগুনে নাসুনিন নামে একটি ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে, যা মস্তিষ্কের শিরা-উপশিরার দেয়ালে চর্বি জমতে বাধা দেয়। ফলে ব্রেইন স্ট্রোক, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত রোগের ঝুঁকি কমে যায়। মস্তিষ্কের রক্তে অঙ্েিজনের মাত্রা ও সরবরাহ বাড়িয়ে দেয় ফলে কর্মোদ্দীপনা বাড়ে।
কম ক্যালরি-সমৃদ্ধ বলে যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরা খাদ্য তালিকায় বেগুন যোগ করতে পারেন।
বেগুনে রয়েছে উচ্চমাত্রার আঁশ। তাই এটি বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
চার সপ্তাহ বা এরও কম সময়ে বেগুন রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনে।
বেগুনের অ্যান্টি-ইনফ্লেম্যাটরি বৈশিষ্ট্য আছে, ফলে ত্বকের জ্বালাপোড়া কমায় এবং দেহকে নির্বিষকরণে সহায়ক। এটি ত্বকের ক্যান্সার রোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
যেসব মহিলা নিয়মিত শাকসবজি, বিশেষত বেগুন খান তাদের ঋতুস্রাবের সমস্যা হয় তুলনামূলকভাবে কম।

বেগুনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ

কাঁচা বেগুন খাওয়া উচিৎনয়, তাতে পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। যাদের অ্যালার্জি জনিত সমস্যা রয়েছে তা দের জন্য বেগুন ভীষণ ক্ষতিকর। এছাড়াও, যাঁরা আর্থ্রাইটিস বা সন্ধিপ্রদাহে ভুগছেন, বেগুন তাঁদের জন্য ক্ষতিকর। বেগুন অনেকের গলদেশ ফোলা, বমি ভাব, চুলকানি এবং চামড়ার ওপর ফুসকুড়ির সমস্যা তৈরি করে থাকে। তাই মায়েদের উচিত বেগুন খাওয়ানোর সময় বাচ্চাদের ওপর এর প্রভাব লক্ষ করা।

মাটি : প্রায় সব ধরনের মাটিতেই বেগুন জন্মে। তবে দোআশ, পলি-দোআশ ও বেলে-দোআশ মাটি বেগুন চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী।

জাত : বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন জাতের বেগুনের চাষ হয়। এসব জাতের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি বেগুন-১ (উত্তরা), বারি বেগুন-২ (তারাপুরি), বারি বেগুন-৪ (কাজলা), বারি বেগুন-৫ (নয়নতারা), বারি বেগুন-৯ ও বারি বেগুন ১০ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কিছু দেশীয় জাত সারা দেশে বহুদিন থেকে চাষ করা হচ্ছে। জাতগুলো হলো ইসলামপুরি, শিংনাথ, খটখটিয়া, ঝুমকা, কাজী ও ভাঙ্গুরা। এসব ছাড়া লাবণী, শ্রাবণী, বনানী, বারি হাইব্রিড বেগুন-৩ ও বারি হাইব্রিড বেগুণ-৪ নামের বেশ কিছু হাইব্রিড জাতের বেগুন চাষ হচ্ছে।

বারি বেগুন-১ (উত্তরা) : জাতটি ১৯৮৫ সালে অনুমোদন লাভ করে। চারা রোপণের ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি গাছে গড়ে ১০০ থেকে ১৫০টি ফল ধরে। হেক্টরপ্রতি ফলন ৬০ থেকে ৬৫ টন। শীতকালে সারা দেশে চাষযোগ্য।

বারি বেগুন-২ (তারাপুরী) : এটি একটি উচ্চফলনশীল সঙ্কর জাত। ১৯৯২ সালে জাতটি অনুমোদন লাভ করে। ফল কালচে-বেগুনি রঙের এবং বেলুনাকৃতি। এ জাতটি উচ্চফলনশীল। হেক্টরপ্রতি ফলন ৭৫ থেকে ৮৫ মেট্রিক টন। শীতকালে সারা দেশে চাষযোগ্য।

বারি বেগুন-৪ (কাজলা) : সঙ্করায়ণ ও পরে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবিত বারি বেগুন-৪ জাতটি ১৯৯৮ সালে অনুমোদন লাভ করে। এটি একটি উচ্চফলনশীল জাত। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৫৫ থেকে ৬০ মেট্রিক টন। এ জাতের ফলের আকার মাঝারি লম্বা, রঙ কালচে-বেগুনি। গাছপ্রতি ৭০ থেকে ৮০টি করে ফলন হয়। আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

বারি বেগুন-৫ (নয়নতারা) : বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবিত এ জাতটি ১৯৯৮ সালে অনুমোদন লাভ করে। এটিও একটি উচ্চফলনশীল জাত। প্রতি গাছে ২৫ থেকে ৩০টি করে বেগুন ধরে। প্রতিটি বেগুনের ওজন ১২০ থেকে ১৩০ গ্রাম। অন্যান্য জাতের তুলনায় এটি আগাম ফল দেয়। হেক্টরপ্রতি ফলন ৪৫ থেকে ৫০ টন।

বারি বেগুন-৯ : এ জাতটি ২০০৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক চাষের জন্য অনুমোদন লাভ করে। গাছে ৩০ থেকে ৩৫টি ফল ধরে। ফল ডিম্বাকৃতি, রঙ গাঢ় সবুজ। নিচের দিক সাদাটে দাগ আছে। ফলের গড় ওজন ১০০ গ্রাম। শীতকালে চাষযোগ্য এ জাতের বেগুনের হেক্টরপ্রতি ফলন ৫৫ টন।

বারি বেগুন-১০ : তাপ সহনশীল হওয়ায় জাতটি সারা বছর চাষ করা যায়। ফল লম্বা আকৃতির। ফলের গড় ওজন ১০০ গ্রাম। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৫৫ মেট্রিক টন।


  উচ্চ ফলনশীল জাতঃ উচ্চ ফলনশীল জাত গুলো হলোঃ

জাত
কোম্পানীর নাম
বীজ বপনের সময়
উত্তরা (বারি বেগুন ১)
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট(BARI)
শীতকাল
শুকতারা
BARI
শীতকাল
তারাপুরী (বারি বেগুন ২)
BARI
শ্রাবণ-ভাদ্র
কাজলা (বারি বেগুন ৪)
BARI
নয়নতারা (বারি বেগুন ৫)
BARI
হাইব্রীড বেগুন জায়েন্ট গ্রিন, সুরভী
ব্র্যাক সীড
হাইব্রীড বেগুন লবনী, বনানী, পার্থিব, শ্রাবনী, (উফশী-সিংনাথ, কাজলা, ইভা)
লালতীর সীড লি:
জুলাই থেকে নভেম্বর মাস
হাইব্রীড বেগুন বিজয়, উৎসব, আনন্দ, হাসি, খুসি
মল্লিকা সীড কো. (MSC)
আষাঢ় থেকে অগ্রহায়ণ
হাইব্রীড বেগুন কে.এস-১,,
কৃষিবিদ গ্রুপ
সারা বছর চাষ করা যায়
হাইব্রীড বেগুন বিএসএস-৬৩৩,৫১৩/৭৩৯,৬২৬/৬১৯/৭৯০,৩৩২, হারসা/পান্না, জনক
বেজো শীতল সীডস (বাংলাদেশ) লি: (BCSBL)
সারা বছর
হাইব্রীড বেগুন চিত্রা, রওশনী, (উফসী- শিংনাথ, নয়নতারা)
গেটকো এগ্রো ভিশন লি:
হাইব্রীড বেগুন রঙ্গিলা, শ্রাবন্তী, লম্বা বেগুন
নামধারী মালিক সীডস (NMS)
হাইব্রীড বেগুন অলসিজন এফ-১, হারিয়া এফ-১, (ব্লাক বিউটি/লংপার্পল/ত্র্যান্তি)
পাশাপাশি সীড কো:
আষাঢ়-অগ্রহায়ণ
হাইব্রীড বেগুন মোহিনী, আনন্দ
ইউনাইটেড সীড ষ্টোর (USS)
১৫ ই আষাঢ় মাস থেকে আশ্বিনের শেষ পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়
হাইব্রীড বেগুন কাজল
বেজো শীতল সীডস (বাংলাদেশ) লি: (BCSBL)
সারা বছর
বেগুন উফশী বাশরী
ম্যাপল
বপন সময় ভাদ্র ও অগ্রহায়ন

জমি তৈরি :বাংলাদেশের সব ধরনের মাটিতে ও সব এলাকায় বেগুন চাষ কারা যায়। তবে বর্ষাকালে পানি জমেনা এ ধরনের উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। তাছাড়া হালকা বেলে থেকে ভারী এটেল মাটি অর্থাৎ প্রায় সব ধরনের মাটিতেই বেগুনের চাষ করা হয়। হালকা বেলে মাটি আগাম জাতের বেগুন চাষের জন্য উপযোগী। এই ধরণের মাটিতে বেগুন চাষ করতে হলে প্রচুর পরিমাণ জৈবসারসহ অন্যান্য সার ঘন ঘন প্রয়োগ করতে হবে। এটেঁল দো-আঁশ ও পলি দো-আঁশ মাটি বেগুন চাষের জন্য উপযোগী এবং এই মাটিতে বেগুনের ফলন বেশী হয়।

জমি তৈরি : পাঁচ থেকে ছয়টি চাষ ও মই দিয়ে আগাছা বেছে মাটি মোলায়েম করে বেগুন চাষের জন্য ভালোভাবে জমি তৈরি করতে হবে।

বীজ তলা তৈরীঃ বীজতলায় মাটি হতে হবে উর্বর। উর্বরতা কম থাকলে জৈব সার ও সামান্য পরিমাণ ফসফেট জাতীয় সার ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতি বর্গ মিটার বীজতলার জন্য ১-২ ডালি পঁচা গোবর সার ও ৩০ গ্রাম টিএসপি সার ব্যবহার করা যেতে পারে। চাষের পর সম্পূর্ণ জমিকে কয়েকটি ছোট ছোট বীজতলাতে ভাগ করে নিতে হবে। প্রতিটি বীজতলা দৈর্ঘ্যে ৩-৫ মিটার, প্রস্থে এক মিটার ও পাশ থেকে ৬-৮ ইঞ্চি ফাঁকা জায়গা রাখা উচিত। পাশাপাশি দুটো বীজতলার মধ্যে ১-১.৫ হাত ফাঁকা জায়গা রাখা উচিত। এ ফাঁকা জায়গা থেকে মাটি নিয়ে বীজতলা উঁচু করে নিতে হবে।

বীজ বপন ও চারা উৎপাদন :
শীতকালীন বেগুন চাষের জন্য মধ্য আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় চারা উৎপাদনের উপযুক্ত সময়। প্রথমে বীজতলায় ঘন করে বীজ ফেলতে হবে। বীজ গজানোর ১০ থেকে ১২ দিন পর গজানো চারা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করা বাঞ্ছনীয়। বীজতলায় মাটি ও সমপরিমাণ বালি এবং কম্পোস্ট মিশিয়ে ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হবে। বীজ বপনের জন্য ৩ বাই ১ বর্গ মিটার মাপের প্রতি বীজতলায় প্রায় ৮ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।

চারা রোপণ : ৫ থেকে ৬ সপ্তাহ বয়সের চারা ৭৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি করে ৬০ সেন্টিমিটার অন্তর রোপণ করতে হবে। বিভিন্ন জাতের বেগুন গাছের আকার অনুযায়ী এ দূরত্ব ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার কম-বেশি হতে পারে।  ৩৫-৪৫ দিন বয়সের চারা রোপণের উপযোগী হয়। এ সময় চারাতে ৫-৬টি পাতা গজায় এবং চারা প্রায় ৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। বেগুনের চারার বয়স একটু বেশী হলেও লাগানো যেতে পারে। চারা তোলার সময় যাতে শিকড় নষ্ট না হয সেজন্য চারা তোলার ১-২ ঘন্টা আগে বীজতলায় পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে।

সার ব্যবস্থাপনাঃ
বেগুন মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান শোষণ করে। এজন্য বেগুনের সন্তোষজনক উৎপাদন সার ব্যতীত সম্ভব নয়। সারের পরিমাণ মাটির উর্বরতা শক্তির উপর নির্ভর করে। বেগুন চাষের জন্য হেক্টর প্রতি নিম্ন লিখিত পরিমাণে সার সুপারিশ করা যেতে পারে। প্রথম কিস্তি সার চারা লাগানোর ১০-২৫ দিন পর, দ্বিতীয় কিস্তি ফল ধরা আরম্ভ হলে এবং তৃতীয় ফল তোলার মাঝামাঝি সময়ে দিতে হবে। জমিতে রস না থাকলে সার প্রয়োগের পর পরই সেচ দিতে হবে।


সারের নাম
সার দেওয়ার সময়
একর প্রতি সারের পরিমাণ
গোবর বা
কম্পোষ্ট
শেষ চাষের সময়
কম উর্বর জমি
০৬ টন
মধ্যম উর্বর জমি
০৪ টন
বেশী উর্বর জমি
২-২.৫ টন
ইউরিয়া




প্রথম কিস্তি
৬০ কেজি
৫০ কেজি
৪০ কেজি
দ্বিতীয় কিস্তি
৬০ কেজি
৫০ কেজি
৪০ কেজি
তৃতীয় কিস্তি
৬০ কেজি
৫০ কেজি
৪০কেজি
টিএসপি
শেষ চাষের সময়
১২০ কেজি
২৫০ কেজি
৮০ কেজি
এমপি
শেষ চাষের সময়
৬০ কেজি
৬০ কেজি
৮০ কেজি
টিএসপি
প্রথম কিস্তি
৬০ কেজি
৩০ কেজি
২০ কেজি
এম ও পি
দ্বিতীয় কিস্তি
৬০ কেজি
৩০ কেজি
২০ কেজি
জিপসাম
শেষ চাষের সময়
৬০ কেজি
৫০ কেজি
৪০ কেজি

 দেশী জাতের বেগুন যেমন ইসলামপুরী, খটখটিয়া, শিংনাথ ইত্যাদির ক্ষেত্রে সারের পরিমাণ ২৫% কম দিলেও চলবে।


পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা:
বেগুনের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। কোন কোন এলাকায় ক্ষুদ্র লাল মাকড় প্রধান শত্রু। এছাড়া কাঁটালে পোকা বা ইপলাকনা বিট্‌ল, জাব পোকা, ছাতরা পোকা, বিছা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, থ্রিপস, কাটুই পোকা ইত্যাদি বেগুনের ক্ষতি করে থাকে। আইপিএম পদ্ধতিতে এসব পোকা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
 


রোগ ব্যবস্থাপনা:
এ দেশে বেগুনের ঢলে পড়া ও গোড়া পচা দু
টি মারাত্মক রোগ। প্রায় বেগুন ক্ষেতেই এ রোগ দেখা যায়। ফল পচা রোগেও অনেক বেগুন নষ্ট হয়। বীজতলায় ড্যাম্পিং অফ রোগ চারার মড়ক সৃষ্টি করে। এ ছাড়া মোজেইক, ক্ষুদে পাতা, শিকড়ে গিঁট ইত্যাদি রোগও বেগুন ফসলের যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে।



রোগের নাম
লক্ষন
প্রতিকার
কীটনাসকের নাম
ঢলে পড়া বা নেতিয়ে পড়া রোগ
আক্রান্ত গাছের কচি পাতা প্রথমে ঢলে পড়ে কিংবা নীচের বয়স্ক পাতা বিবর্ণ হয়ে যায়।শিকড়ের মাধ্যমে আক্রমন শুরু হলেও পরে তা কান্ডে ছড়িয়ে পড়ে।  রোগের জীবানু মাটি থেকে পানি গ্রহন ও সঞ্চালনে বাধা দেয়, ফলে গাছ ঢলে পড়ে ও শেষে মারা যায়।
১. ঢলে পড়া চারা দেখা মাত্রই তুলে তা ধ্বংস করতে হবে। ২. জমি সব সময় আর্দ্র বা ভিজা না রাখা এবং পানি নিকাশের ব্যবস্থা রাখা।৩. রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডব্লিউজি প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে রিডোমিল গোল্ড মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ভালভাবে স্প্রে করুন।




রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডব্লিউজি
চারা ধবসা রোগ
বীজতলায় চারা গজানোর পর থেকে মূল ক্ষেতে চারা রোপন পর্যন্ত এ রোগের আক্রমন হয়ে থাকে। অংকুরিত বীজের বীজপত্র, কান্ড এবং শিকড় নষ্ট করে দেয়।আক্রান্ত চারা প্রথমে হালকা সবুজ হয়ে ঢলে যায় এবং সম্পূর্ন চারাটিই মরে যায়। আক্রান্ত চারা ২-৪ দিনের মধ্যেই পচে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
১. শোধনকৃত বীজ বপন করা এবং রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডব্লিউজি (প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে ৫ শতাংশ জমির জন্য)। ব্যবহার করে বীজতলার মাটি শোধন করা যায়। ২. আক্রান্ত গাছ জমি থেকে তুলে ধ্বংস করতে হবে।




রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডব্লিউজি
ডাউনি মিল্ডিউ
এর জন্য গাছের পাতা ধূসর হয়ে যায়। পাতায় সাদা পাউডার দেখা যায়
১. থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি- প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫০ গ্রাম থিয়োভিট মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ১৫ দিন পর পর সেপ্র করুন।

থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি
মোজাইক
কচি চারার বীজপত্র হলুদ হয় এবং চারা নেতিয়ে পড়ে। কচি ডগা জটলার মত দেখায়।  আক্রান্ত পাতা ছোট, বিবর্ণ, বিকৃত ও নীচের দিকে কুঁকড়ানো হয় এবং শিরা-উপশিরাও হলুদ হয়ে যায়।
১. আক্রান্ত গাছ তুলে ধ্বংস করতে হবে।২. ক্ষেত আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। ৩. বাহক পোকা সাদা মাছি দমন করতে হবে (একতরা ২৫ ডব্লিউজি- ২.৫ গ্রাম একতারা প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে সেপ্র করতে হবে)।



(একতারা ২৫ ডব্লিউজি)
বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী    পোকা
বেগুনের বোঁটার নীচে ছোট ছিদ্র দেখা যায়। কচি ডগা ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে যায়। আক্রান্ত ফলের ভিতরটা ফাঁপা ও পোকার বিষ্ঠায় পরিপূর্ণ থাকে।
নিমবিসিডিন, ৮০ এম এল/একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

নিমবিসিডিন
ফাইটার ২.৫ ইসি-৪১০ এম এল/লি. পানি
ফাইটার ২.৫ ইসি
রিপকরট ১০ ই সি ২০০ এম এল/একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে (১ এম এল /লি. পানি)
রিপকরট ১০ ই সি
সবিক্রন ৪২৫ ই সি, ৪০০ এম এল / একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
সবিক্রন ৪২৫ ই সি,
আলফাটাফ ৫০ এস পি, ২৪৫-৩২৫ গ্রাম/একর(১২-১৬ গ্রাম/১০ লি. পানি)
আলফাটাফ ৫০ এস পি 

 বা,
প্রোক্লেইম
মাছি পোকা
১. স্ত্রী মাছি কচি ফলে ডিম পাড়ে।২. ডিম ফুটে কীড়াগুলো বরে হয়ে ফলের শাস খায় এবং ফল পচে যায় ও অকালে ঝরে পড়ে।
১. প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে প্লেনাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ২. সবিক্রন ৪২৫ ইসি- প্রতি লিটার পানিতে ২ এমএল হারে মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করুন। ।


প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি,সবিক্রন ৪২৫ ইসি
টিডো ২০ এস.এল-১০০-১০৫ এম এল / একর জমিতে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

টিডো ২০ এস.এল
কাটুই পোকা
কীড়া অবস্থায় এই পোকা দিনের বেলা মাটির ফাটলে বা গর্তে লুকিয়ে থাকে। রাতের বেলা বের হয়ে চারা গাছের গোড়ার মাটি বরাবর কেটে দেয়।
১. ক্যারাটে ২.৫ ইসি-বেগুনের চারা রোপনের পর প্রতি শতাংশ জমিতে ৩ এমএল ক্যারাটে প্রয়োজনীয় পানির সাথে মিশিয়ে সারি ভিজিয়ে স্প্রে করুন।


ক্যারাটে ২.৫ ইসি
গোলা ৪৮ ইসি-১.৪০ লি./একর(৬৯ মিলি/১০ লি.- ৫ শতাংশ জমির জন্য)
গোলা ৪৮ ইসি
ছাতরা পোকা/মিলিবাগ
ছাতরা পোকা বেগুন গাছের পাতার বোঁটা এবং কচি ডগার রস চুষে খায়। এর দেহ থেকে মধু জাতীয় পদার্থ নিঃসৃত হয় এবং আক্রান্ত অংশে কালো ছাতা বা শুটি মোন্ড ছত্রাকের আক্রমন হয়। গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হয় এবং কোন ফুল/ফল ধরে না। অনেক সময় পাতা নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে গাছ মারা যায়।
১. রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছিঁড়ে ফেলা ।২. সম্ভব হলে হাত দিয় ডিমের গাদা বা পোকা ধ্বংস করা। ৩. নিমবিসিডিন, ৮০ এম এল/একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।




নিমবিসিডিন
বেগুনের কাঠালে পোকা
বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক পোকা পাতার উপরের সবুজ অংশ খেয়ে জালের মত ঝাঁঝরা করে ফেলে।আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। আক্রমন বেশি হলে গাছ মারা যায়।
১. আক্রমণের প্রথম অবস্থায় ডিমের গাদা এবং পাতাসহ কীড়া হাত দিয়ে সংগ্রহ করে ধ্বংস করা।২. গাছের গোড়সহ বেগুনের সম্পূর্ন মাঠ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। ৩. আক্রমনের মাত্রা তীব্র হলে সবিক্রন ৪২৫ ইসি (প্রতি লিটার পানিতে ২ এমএল হারে) প্রয়োগ করুন।



সবিক্রন ৪২৫ ইসি
পাতা মোড়ানো পোকা
কীড়া পাতা মুড়িয়ে ফেলে এবং ভিতরে বসে পাতার সবুজ অংশ কুড়ে কুড়ে খায়।ফলে মোড়ানো পাতা জালের মত ঝাঝড়া হয়ে যায় ও পরে সাদা হয়ে শুকিয়ে যায়। সবুজ ডগা ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে এবং ডগার ভিতরের অংশ খায় ফলে ডগা সাদা হয়ে যায়।
১. আক্রমণের প্রথম অবস্থায় ডিমের গাদা এবং পাতাসহ কীড়া হাত দিয়ে সংগ্রহ করে ধ্বংস করা।২. গাছের গোড়সহ বেগুনের সম্পূর্ন মাঠ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। ৩. আক্রমণের মাত্রা তীব্র হলে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করা।

জাব পোকা
পূণবয়স্ক ও নিম্ফ উভয়েই পাতা, কচি কান্ড, ফুল ও ফলের কুঁড়ি, বোঁটা এবং ফলের কচি অংশের রস চুষে খায়। ফলে গাছ প্রথমে দুর্বল ও পরে হলুদ হয়ে যায়। গাছে ফুল ও ফল অবস্থায় আক্রমণ হলে ফুলের কুঁড়ি ও কচি ফল ঝরে পড়ে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে কচি ডগা মরে যায়।
১. আক্রান্ত পাতা, ডগা, ফুল পোকাসহ সংগ্রহ করে ধ্বংস করা।২. একতারা ২৫ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে ২.৫ গ্রাম একতারা প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালভাব গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। ৩. প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে প্লেনাম মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।



একতারা ২৫ ডব্লিউজিপ্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি
টিডো ২০ এস.এল-১০০-১০৫ এম এল / একর জমিতে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
টিডো ২০ এস.এল
ফাস্টাক ২ ই সি, ২০২ মি লি ১ একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে(১ এম এল/১ লি. পানি)
ফাস্টাক ২ ই সি
  






***   ফেরমোন ট্রাপ দিয়ে ক্ষতিকর পোকা দমন করা যেতেপারে।


 


ফল সংগ্রহ ও ফলন: ফল সম্পূর্ণ পরিপক্ক হওয়ার পূর্বেই সংগ্রহ করতে হবে। ফল যখন পূর্ণ আকার প্রাপ্ত হয় অথচ বীজ শক্ত হয় না তখন ফল সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। সংগ্রহের সময় ফলের ত্বক উজ্জ্বল ও চকচকে থাকবে। অধিক পরিপক্ক হলে ফল সবুজাভ হলুদ অথবা তামাটে রং ধারণ করে এবং শাঁস শক্ত ও স্পঞ্জের মত হয়ে যায়। অনেকে হাতের আঙুলের চাপ দিয়ে ফল সংগ্রহের উপযুক্ত কিনা তা নির্ধারণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে দুই আঙুলের সাহায্যে চাপ দিলে যদি বসে যায় এবং চাপ তুলে নিলে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে তবে বুঝতে হবে বেগুন কচি রয়েছে আর চাপ দিলে যদি নরম অনুভূত হয়, অথচ বসবে না এবং আঙ্গুলের ছাপ থাকে তাহলে বুঝতে হবে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়েছে। বেশী কচি অবস্থায় ফল সিকি ভাগ সংগ্রহ করলে ফলের গুণ ভাল থাকে, তবে ফলন কম পাওয়া যায়। ফলের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে পরিপক্ক পর্যায়ের কাছাকাছি পৌঁছানো পর্যন- বেগুন খাওয়ার উপযুক্ত থাকে। সাধারণতঃ ফুল ফোটার পর ফল পেতে গড়ে প্রায় ১ মাস সময় লাগে। জাত ভেদে হেক্টর প্রতি ১৭-৬৪ টন ফলন পাওয়া যায়।
পরিবহণ পদ্ধতিঃ ফসল সংগ্রহের পর প্রথমে ডালিতে কলা পাতা বিছিয়ে তার উপর বেগুন সাজায়ে রাখতে হবে যাতে কোনো দাগ না পরে।
পরিবহণের মাধ্যমঃ সাধারনত ঝুড়ি / ডালিতে করে পরিবহন করা হয় তবে বেশি আকারে হলে পিক-আপ / ট্রাকের মাধমেও পরিবহন করে হয়।
প্যাকেজিং:  প্যাকেজিং এর জন্য ফুড রেপিং পেপার, পেরফোরেটেড পেপার, ঝুড়ি, খাঁচা, প্লাস্টিক কেস প্রভৃতি ব্যবহার করা জেতে পারে।

সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ   স্বল্প পরিসরে ৩-৫ দিন সংরক্ষণ করা যায়।

তথ্যসূত্রঃ গুগল, বাস্তব চিত্র।

No comments:

Post a Comment